চোখের কী হবে জানেন না, মাথার খুলিতে এত গুলি নিয়ে ঘুমাতে কষ্ট হয়
আর্থিক কারণে অষ্টম শ্রেণির পর আর পড়াশোনার সুযোগ হয়নি অনিক হাওলাদারের (২০)। অন্য ভাইদের সঙ্গে তাঁকে কাজে নামতে হয়। অনিকের এমন বন্ধু আছেন, যাঁরা পড়াশোনা করছেন। তাঁরা গত জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনে তাঁকে অংশ নিতে বলেন।
বন্ধুদের ডাকে সাড়া দিয়ে গত ১৮ জুলাই আন্দোলনে যোগ দেন অনিক। সেদিনই তিনি পুলিশের গুলিতে আহত হন। অনিক বলেন, তাঁর চোখ-মুখ-মাথায় গুলি লাগে। দুটি চোখই মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি একটি চোখে আবছা দেখতে পান। অপর চোখটি আর ভালো হবে কি না, জানেন না। তা ছাড়া তাঁর মাথায় খুব যন্ত্রণা হয়। এই যন্ত্রণা নিয়ে ঘুমাতে খুব কষ্ট হয়।
জুলাইয়ের উত্তাল সময়ে ঢাকার সঙ্গে অন্যান্য জেলার যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। অনিককে ১৯ জুলাই ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকেও তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলা হয়।
পরদিন রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হন অনিক। তিনি বলেন, এখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে জানান, তাঁর দুটি চোখই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়।
পরবর্তী সময়ে রাজধানীর বাংলাদেশ আই হসপিটালে চিকিৎসা নিতে শুরু করেন অনিক। তিনি বলেন, এখানে তাঁর ডান চোখে অস্ত্রোপচার হয়। তিনি এখন এই চোখের এক পাশ দিয়ে আবছা দেখতে পান। কিন্তু সোজাসুজি কিছু দেখতে পান না। আর তাঁর বাঁ চোখ ভালো হবে কি না, তা তিনি জানেন না।
বাংলাদেশ আই হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শল্যবিদ নিয়াজ আবদুর রহমান অনিকের চিকিৎসায় যুক্ত ছিলেন। এখানে বিনা মূল্যে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানান নিয়াজ আবদুর রহমান। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, অনিকের দুই চোখে গুলি একদম সামনে থেকে লেগে কর্নিয়া ভেদ করে অরবিটে (অক্ষিকোট) ঢুকে গেছে। তাঁর দুই চোখই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁর ডান চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে।
সেখানে অনেক রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। চোখটির মাঝখানে অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই এই চোখে তাঁর সোজা তাকিয়ে দেখার সম্ভাবনা কম। পাশ দিয়ে আবছা হয়তো দেখবেন। বাঁ চোখের অবস্থা অনেক খারাপ। এই চোখে কর্নিয়া লাগবে। সে ক্ষেত্রে কাউকে চক্ষুদান করতে হবে। এ ছাড়া তাঁর মাথার খুলিতে গুলি আছে। এর জন্য তাঁর নিউরো চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
No comments